কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাদুকা শিল্পের কারিগররা।

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ব্যস্ত সময় পার করছেনপাদুকা শিল্পের কারিগররা।
মাহফুজ হাসান,কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
বিশ্বময় করোনা মহামারি জীবন যাত্রার মান অচলায়তন কাটছে মানুষের জীবন।
করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন পাদুকা বা জুতার  কারখানার মালিকরা। বেচাকেনা ছিল অত্যন্ত নমনীয় । তবে এবার করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান মালিকরা। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ভৈরবের পাদুকা তৈরির কারখানাগুলোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কয়েক হাজার কারিগর।
দেশের সবচেয়ে বড় পাদুকা প্রস্তুতকারক এলাকা কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা। পাদুকা ব্যবসার সাথে জড়িয়ে আছে সিংহভাগ মানুষ। ভৈরবের পাদুকা
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই সরবরাহ করা হয়, পাশাপাশি দেশের বাহিরেও রয়েছে এর চাহিদা।
 জানা যায়,এ উপজেলার পাদুকা শিল্পের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে। প্রথম দিকে কারখানা স্থাপন করা হয় ভৈরব উপজেলা পরিষদ এলাকায়। এরপর থেকে কারখানার সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে। এখন আশপাশের ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে ৮ থেকে ৯ হাজার ছোট-বড় পাদুকা কারখানা।
এমনকী ভৈরব ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী বাজিতপুর আর কুলিয়ারচর উপজেলাতেও বেশ কিছু পাদুকা কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার শ্রমিক কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন।
রপ্তানিমুখী এ শিল্পের  কারখানার মালিকরা বলছেন, দেশে করোনা পরিস্থিতিতে গত দুই বছরে পাদুকা শিল্পের উপকরণ চামড়া, রেক্সিন, ফোম, হিল, কভার, পেস্টিং, সুতা, বোতাম, সলিউশন ইত্যাদি পণ্য আমদানি বন্ধ ছিল। এজন্য দেশের বাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। ফলে জুতা তৈরিতে খরচ আগের তুলনায় বেশি লাগছে।
ভৈরব গাছতলাঘাট এলাকার “তাহমিনা স্যান্ডেল ফ্যাক্টরির” স্বত্বাধিকারী মো.মিয়ার উদ্দিন অপু বলেন, ‘গত দুই বছরে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চলতি বছর পুরোদমে কারখানায় পাদুকা উৎপাদন চলছে। তবে পাদুকা তৈরির উপকরণের দাম যে হারে বেড়েছে সে তুলনায় জুতার দাম বাড়েনি। ফলে বেচাবিক্রি নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তাও কাজ করছে।
“সজীব ফুটওয়্যার ফ্যাক্টরির” মালিক মো. জিয়া উদ্দিন বলেন, এই বছর ভৈরবের জুতা মার্কেট গত বছরের তুলনায় কিছুটা ভালো রয়েছে। ভৈরবের তৈরি জুতা কিনতে বিভিন্ন জেলার পাইকারি বিক্রেতারা ভিড় করছেন। চলতি বছর অন্যান্য বছরে তুলনায় পাদুকা কারখানায় বাহারি রকমের নতুন নতুন ডিজাইনের জুতা উৎপাদন করা হয়েছে বলে জানান তিনি ।
তবে মজুরি না বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন পাদুকা তৈরির কারিগর আবুল বাশার। তিনি  বলেন, ‘দেশে যে হারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে সে তুলনায় আমাদের কাজের মজুরি বাড়েনি। সারাদিন কাজ করে মজুরি পাই ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। অথচ সংসারে বাজার খরচ লাগে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।স্বল্প মজুরি দিয়ে সংসার চালাতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে।
জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের
পাদুকা কারখানার সাথে সম্পৃক্ত আরমান হোসেন বলেন,মহামারির কারণে জুতার উপকরণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা মালিকপক্ষ উপযুক্ত মুনাফা অর্জনে স্বচেষ্ট নয়,তাই কারিগরদের চাহিদাও ঠিকমত পূর্ণ করা যায়না।তবে দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে কারিগরদের পারিশ্রমিক হয়তো আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।আসন্ন ঈদে ভালো একটা ফলাফল আশা করছি।
নোয়াখালী থেকে জুতা কিনতে এসেছেন পাইকারি ব্যবসায়ী রহমান মিয়া। তিনি বলেন, প্রতি বছরই ঈদের মৌসুমে ভৈরবের জুতা কিনতে আসি। এখানকার উৎপাদিত জুতা খুবই উন্নতমানের এবং দেশব্যাপী এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে এ বছর জুতার দাম বেশি বলে দাবি করেন তিনি।
ভৈরব পাদুকা কারখানা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সবুজ মিয়া  জানান, করোনার কারণে গত দুই বছরে জুতা শিল্পে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে এবার যেহেতু পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে তাই বড় পরিসরে জুতা উৎপাদন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ বছর জুতা তৈরির উপকরণের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। ফলে প্রতিটি জুতা তৈরিতে উৎপাদন খরচ গড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে জুতা বিক্রি কমে গেছে।
জুতা তৈরির উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির জন্য আমদানিকারক সিন্ডিকেটকে দায়ী করে এ বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন এ ব্যবসায়ী নেতা।

আপনি আরও পড়তে পারেন